নেফাস এর বর্ণনা

স্ত্রীলোকের সন্তান প্রসবের পর গর্ভ হইতে যে রক্তস্রাব হয় উহাকে নেফাস বলে। নেফাসের সর্বোচ্চ মুদ্দত ৪০ দিন কম মুদ্দতের কোন সীমা নাই। ৪০ দিনের বেশী রক্ত দেখা গেলে উহাকেও এস্তেহাজা বা রোগ মনে করিতে হইবে।
নেফাসের রক্ত ১৫,২০,২৫,২৭,৩০,৩৫ দিনের মধ্যে কিংবা উক্ত মুদ্দতের মধ্যে যে কোনদিন বন্ধ হইতে দেখিলে তখন গোসল করিয়া নামাজ দোআ পড়া ইত্যাদি কার্য করিবে।

হায়েজ ও নেফাস অবস্থার হুকুম

হায়েজ অথবা নেফাস ওয়ালী স্ত্রীলোক মসজিদে প্রবেশ করিতে পারিবে না। কোরআন শরীফ বা উহার কোনও আয়াত স্পর্শ করিতে বা মুখস্ত পড়িতে পারিবে না। তবে কোরআন শরীফ গেলাফে জড়ানো থাকিলে গেলাফের উপর দিয়া স্পর্শ করা দুরুস্ত আছে। অনেকে নাপাক অবস্থায় পরনের শাড়ী দোপাট্রা বা কামিজের আচল দ্বারা কোরআন শরীফ স্পর্শ করে। ইহাও দুরুস্ত নাই। পরিধানের কাপড় ছাড়া আলাদা কোন পাক কাপরে সাহায্যে স্পর্শ করিলে দুরুস্ত হইবে।
যে মহিলা ছাত্র ছাত্রীদের কোরআন শরীফ পড়ান নিজের হায়েজ নেফাসের অবস্থায়ও যদি তাহার পড়াইতে হয় তবে শুধু বানান পড়াইবেন মতন পড়াইবেন না। আর যদি মতনও পড়াইতে  হয় তবে প্রত্যেক আয়াতকে আলাদা আলাদা অংশ করিয়া দুই এক শব্দের পরপর নিঃশ্বাস ছাড়িয়া পড়াইবেন যেন প্রতিটি অংশ কোরআন শরীফের ক্ষুদ্রতম আয়াত  অপেক্ষা ছোট থাকে। ছোট আয়াতের সমান হইয়া গেলে গুনাহগার হইবে।
কিন্তু আলহামদু লিল্লাহে সুরা কিংবা কোরআন শরীফ উল্লেখিত কোন দোয়ার আয়াত যেমন রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও অথবা রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ইত্যাদি দোয়ার নিয়তে পড়িলে গুনাহগার হইবে না। তেলাওয়াতের নিয়তে পড়িলে গুনাহগার হইবে।
হায়েজ কিংবা নেফাসের সময়ে নামাজ রোজা কাবা শরীফের তাওয়াফ নিষিদ্ধ। হায়েজের সময়ে যে কয় ওয়াকতের নামাজ পড়িতে না পারে পাক হওয়ার পর সেইগুলির কাজা করিতে হইবে না। কিন্তু রোজা মাফ নাই। রোজার কাজা করিতে হইবে।
হায়েজ চলাকালে নামাজের সময় হইলে ওজু করিয়া কোন পাক জায়গায় কিছুক্ষণ চুপচাপ বসিয়া থাকিয়া আল্লাহ আল্লাহ করিবে নামাজ পড়িবে না। এইরূপ করা মুস্তাহাব।
হায়েজ নেফাসের কালে স্বামী স্ত্রীর সঙ্গম হারাম এবং এই সময়ে স্ত্রীর হাটু হইতে নাভী পর্যন্ত স্থানের প্রতি নযর দেওয়াও মাকরূহে তাহরিমী। হায়েজ কিংবা নেফাসের সময়ে হালাল করিলে কবীরা গুনাহ হইবে। তবে স্ত্রীর হাটু হইতে নাভী পর্যন্ত ছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গ স্পর্শ করা একত্রে আহার করা ও একত্রে শয়ন করা দুরুস্ত আছে।  স্ত্রীর নাপাক অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গমের সুযোগ না পাওয়ায় যদি স্বামী যৌবনের উম্মদনায় ও কামরিপুর তাড়নায় এমনই অস্থির হইয়া পড়ে  যে অন্যত্র পাপ করিয়া ফেলিতে পারে তবে স্ত্রীর রাণে ঘষিয়া অথবা তাহার দ্বারা হস্ত মৈথুন করাইয়া কামোত্তজনা দমন করিতে পারিবে।
হায়েজ নেফাসের সময়ে এক টুকরা কাপড় কয়েক পরতে ভাজ করিয়া (অথবা ডাক্তারখানা হইতে মেডিকেটেড তুলা আনিয়া) উহা গুপ্তাঙ্গের মুখে রাখিয়া দিবে এবং উহার উপরিভাগে একখানি লেংটি পরিবে যেন রক্তের দাগ বাহিরে প্রকাশ না পায়।
এস্তেহাজা অর্থাৎ রক্তস্রাবের বিমারীতে নামাজ রোজা ইত্যাদি সবই করিতে পারিবে। কেননা এই প্রকার স্ত্রীলোকেরা মাজুর বলিয়া বিবেচিত।
নেফাসের সময় নামাজ রোজা কোনটাই করিতে পারিবে না। ভাল হইলে রোজার কাজা করিতে হইবে। নামাজের কাজা করিতে হইবে না।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply