কোন ধরনের মাসাইলে তাকলীদ করা হয় আর কোন ধরনের মাসাইলে তাকলীদ করা হয় না

শারঈ তাকলীদ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ প্রয়োজন। শরীয়তের মাসাইল হচ্ছে তিন রকমের-(১) আকায়িদ (২) ঐ সমস্ত বিধি বিধান যেগুলো কোন গবেষণা ছাড়াই কুরআন হাদীছ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত (৩) ঐ সমস্ত আহকাম যেগুলো কুরআন হাদীছ থেকে গবেষণা করে বের করা হয়েছে।

আকায়িদের ব্যাপারে কারো তাকলীদ বা অনুসরণ নাজায়েয। তফসীরে রূহুল বয়ানে সূরা হূদের শেষাংশের আয়াতঃ-نَصِيْبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوْضٍ 
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ- (এ আয়াতে তাকলীদের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। তাকলীদ হচ্ছে অপরের উক্তিকে বিনা প্রমাণে গ্রহণ করা। এটা  ধর্মের মৌলিক ও আন্তরিক বিশ্বাসের সহিত সম্পর্কিত বিষয়াদি ছাড়া অন্যাণ্য ক্ষেত্রে (আনুসাঙ্গিক ও ধর্মীয় কাজ কর্ম সম্পর্কীয় বিষয়াদিতে) বৈধ কিন্তু ধর্মীয় বুনিয়াদী বিষয়াদি ও আকায়িদের ক্ষেত্রে এটা বৈধ নয়। বরং এ ক্ষেত্রে দলীল প্রামণ ও চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন থেকে যায়।)
যদি কেউ আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করে আমরা তাওহীদ রিসালত ইত্যাদি কিভাবে স্বীকার করে নিয়েছি? এর প্রত্যুত্তরে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর উক্তি বা তার রচিত ফিকহে আকবরের নাম উল্লেখ করলে চলবে না। বরং বলতে হবে যে তাওহীদ ও রিসালাতের দালীলাদির ভিত্তিতে এগুলো স্বীকার করে থাকি। কেননা এগুলো হচ্ছে আকায়িদ সম্পর্কিত বিষয় আকায়িদের ক্ষেত্রে তাকলীদ হয় না।
ফতওয়ায়ে শামীর মুকাদ্দামায়اَلتَّقْلِيْدُ المَفْضُوْلِ مَعَ الْاَفْضَلِ 
এর বর্ণনায় উল্লেখ আছেঃ
(শারয়ী আনুষাঙ্গিক মাসাইল ব্যতীত যে সব বিষয়ে আমরা বিশ্বাস রাখি এবং কারো অনুসরন ছাড়াই যে সমস্ত বিষয়ে বিশ্বাস রাখাটা প্রত্যেক মুকাল্লাফ (বালিগ ও বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি) এর জন্য ওয়াজিব, সেগুলো হলো, আকায়িদের সহিত সম্পৃক্ত বিষয় যার ধারক ও বাহক হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত অর্থাৎ আশা’ইয়রা ও মাতুরীদিয়াহ সম্প্রদায়।) তাফসীরে কবীরে ১ম পারার আয়াত- فَاجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ  এর তাফসীলে লিপিবদ্ধ আছেঃ-

هذِهِ الْايَةُ تَدُلُّ عَلى اَن التَّقْلِيْدَ غَيْرُ كَافٍ فِى الدِّيْنِ وَاَنه لابُدَّ مِنَ النَّظْرِ وَالْاِسْتِدْ لَالِ

অর্থাৎ এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে ধর্মীয় ব্যাপারে তাকলীদ বা অনুসরণ যথেষ্ট নয়, যুক্তি প্রমাণ অন্বেষণেরও প্রয়োজনীতা অনুভূত হয়। 
শরীয়তের সুস্পষ্ট আহকামে কারো তাকলীদ জায়েয নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, নামাযের নির্ধারিত রাকআত সমূহ, ত্রিশ রোযা রাখা অবস্থায় খানাপিনা হারাম হওয়া ইত্যাদি মাসাইল কুরআন হাদীছ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় প্রমাণিত । এ জন্য এ সমস্ত ক্ষেত্রে এ কথা বলা চলবে না যে নামায দিনে পাঁচ বার বা রোযা এক মাস এ জন্য নির্ধারিত, যেহেতু ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেছেন বা তাঁর রচিত ‘ফিকহে আকবরে’ লিখা হয়েছে। বরং এ ক্ষেত্রে কুরআন থেকে সংশ্লিষ্ট দলীল প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হবে।
যে সব মাসাইল কুরআন হাদীছ বা ইজমায়ে উম্মত থেকে গবেষণা ও ইজতিহাদ প্রয়োগ করে বের করা হয়েছে, ঐ সমস্ত মাসাইলে মুজতাহিদ নয় এমন লোকের জন্য তাকলীদ ওয়াজিব।
আমি মাসাইলকে যে ভাবে ভাগ করে দেখিয়েছি ও উল্লেখ করেছি যে কোন ধরনের মাসাইলে অনুসরণ করতে হবে  আর কোন প্রকারের মাসাইলে তাকলীদ বা অনুসরণ করা যাবে না, এ বিষয়ের প্রতি যথার্থরূপে খেয়াল রাখতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে লা-মাযহাবীগণ আপত্তি উত্থাপন করেন যে দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে মাসাইল বের করার মুকাল্লিদের কোন অধিকার নেই। তথাপি আপনারা কেন নামায-রোযার সমর্থনে কুরআনের আয়াত বা হাদীছ সমূহ পেশ করেন? 
এর উত্তরও উপরে বর্ণিত হয়েছে যে নামায-রোযা ফরয হওয়ার ব্যাপারটা তাকলীদী মাসাইলের অন্তর্ভুক্ত নয়। উপরের বর্ণনা থেকে এ কথাও জানা গেল যে আহকাম ছাড়া কোন ঘটনার খবর ইত্যাদিতে তাকলীদ হয় না। যেমন ইয়াযীদ প্রমুখের কাফির হওয়ার সম্পর্কিত মাসাআলা। কিয়াসের ভিত্তিতে বের করা মাসাইলেও ফকীহগণ কুরআন হাদীছ থেকে দলীলাদী পেশ করে থাকেন। এরূপ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বীকৃত সামাইলের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। ঐ সব মাসাইল আগে থেকে ধর্মীয় ইমামের কথা অনুযায়ী স্বীকৃত হয়ে থাকে। সুতরাং দলীলের প্রতি দৃষ্টি পাত না করার অর্থ মুকাল্লিদের দলীল-প্রমাণাদির ভিত্তিতে সমস্যার সমাধাণ খুঁজে বের করা চলবে না। -সুত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply